আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার, এটি রক্তকে পরিষ্কার করার সাথে সাথে খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে, লিভার দ্বারা উৎপন্ন বায়েল জুস খাবার পরিপাক করার কাজে সহায়তা করে,
কিন্তু আমাদের মর্ডান লাইস্টাইল এর কারণে শরীর বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বাইরে বের করতে পারে না, আর খাবার হজম করার ক্ষমতা কম হয়ে যেতে থাকে, এর প্রধান কারণ হলো বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের সেবন করা, তেলে ভাজা ও বাজার থেকে কেনা ফাস্ট ফুড খাওয়া, এসব কারণে লিভারে খারাপ প্রভাব পড়ে,
Liver Valo Rakhar Ghoroa Upay
আবার অন্য দিকে বেশি ট্রেস বা চিন্তা থাকার কারণে লিভার ঠিক মতো কাজ করতে পরে না, আর এই লিভারের ঠিক কাজ না করার ফলে দীর্ঘদিন ধরে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ গুলো বাইরে বের হতে পারে না, এবং দেহের মধ্যে জমা হতে থাকে, যার ফলে শরীরের সাথে সাথে এর খারাপ প্রভাব পড়ে আমাদের লিভারের উপর,
লিভার ঠিক মতো কাজ করা বন্ধ করে দিলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় যেমন হেপাটাইটিস B, C, জন্ডিস, রক্ত জনিত সমস্যা, ইত্যাদি;
লিভার খারাপ হওয়ার কারণ গুলো হলো
কোনো রোগ হলে কখনো আগে থেকে সেটা বুঝা সম্ভব নয়, তাই শরীর ঠিক রাখতে সর্বদা সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি, এখানে লিভার সম্বন্ধীয় সমসস্যার কিছু লক্ষণ আমরা জানবো যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে আসলে আমাদের লিভারে কোনো সমস্যা আছে কি নেই, আর সঠিক সময়ে যদি রোগের সমস্যার বিষয়ে জানা সম্ভব হয়, তাহলে খুব দ্রুত তা সরিয়ে তোলা সম্ভব হবে,
1. যদি লিভার ঠিক মতো কাজ না করে তাহলে খাবার ভালো ভাবে পাঁচন হতে পারে না ফলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে,
2. সবসময় দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, ত্বক সুখিয়ে যাওয়া, চোখের আসে পাশে কালো ছোপ পড়া, এসব লিভার খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে,
3. লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক অসার হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন চুলের সমস্যা, ত্বকের রঙে পরিবর্তন হওয়া যেমন গোল গোল সাদা দাগ পরিলক্ষিত হওয়া,
4. প্রস্ববের রং বদলে যাওয়া বেশি হলুদ হয়ে যাওয়া লিভার খারাপ হওয়ার সংকেত দেয়, যদি এটা কখনো কখনো হয় তাহলে কম জল পান করার ফলে হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যদি এই সমস্যা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে,
5 ক্ষুদা মন্দা বা খিদে না পাওয়া সমস্যা হলে এবং পেটে গ্যাস বা এসিডিটি সমস্যা যদি প্রিতিনিয়ত দেখা দেয় এটিও লিভার খারাপের একটি লক্ষণ বলে মনে করা হয়,
6. বুকে ব্যাথা হওয়া, বুক চাপ লাগা, বুক জ্বালা করা মুখের স্বাদ খারাপ লাগা, জ্বর না হলেও যদি মুখে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয় এগুলো সবই লিভার খারাপ হওয়ার কারণে হয়,
7. অনেক সময় দেখা যায় পেটে ফুলে উঠেছে এর প্রধান কারণ হতে পরে লিভার বেড়ে যাওয়া, কখনো আমরা শুনে থাকি বা দেখি কিছু ব্যাক্তির লিভার বেড়ে যাওয়ার কথা, এর লক্ষণ হলো দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের তুলনায় পেটের আকার বেশি বড়ো হয়ে যাওয়া, এটা মোটা হওয়ার কারণ মনে করে নেওয়া সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে,
এতো গেলো কিছু লিভারের সমস্যার কিছু লক্ষণ যা সংকেত দেয় লিভার ঠিক আছে কি নেই, এখন আমরা জানবো লিভার সুস্থ সবল রাখতে কিছু হোম রেমিডি বা লিভার সুস্থ রাখার ঘরোয়া টিপস বিষয়ে, যেগুলো সেবনের ফলে লিভারকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী রাখা সম্ভব,
• কিসমিস জল
কিসমিস এর জলে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে, যা হেলথের জন্য খুব উপকারী, কিসমিস হলো এনার্জিতে ভরপুর একটি লো ফ্যাট ফুড, এতে বেশি পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন, আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, কিসমিস জলে ভিজিয়ে খেলে এর গুনুগত মান দ্বিগুণ হয়ে যায়, কিসমিসের জল খেলে এটি লিভারকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে দেয়,
কিসমিসের জল তৈরি করতে তিন থেহে চার গ্লাস জল নিয়ে তাতে ১০০ গ্রাম কিসমিস নিয়ে আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে, এরপর কিসমিস শুদ্ধ জল ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে, তারপর জল ছেকে নিয়ে কিসমিস আলাদা করে নিতে হবে, এই জল সারা রাত একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিয়ে সকাল থেকে সারাদিন অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করতে হবে,
এটি দুই থেকে তিন দিন করতে হবে, ফ্যাটি লিভার ও লিভার সিরোসিস সমস্যার ক্ষেত্রে এটি ভালো ফল দেবে, এছাড়া কিসমিসের জলে যে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে তা দুর্বলতা, ট্রেস দুর করে, কিসমিসের মধ্যে যে ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন তা চোখের জন্য খুব উপকারী,
• বীট ও গাজরের রস
গাজর এবং বিটে ফ্লাবেঞ্জ অয়েল ও বিটাক্যারোটিন থাকে, আর এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, একগ্লাস গাজর ও বিটের জুস খেতে হবে,
এটি প্রস্তুত করতে কোনো জুস মেশিন গাজর ও বিটের রস বের করে নিতে হবে অথবা মিক্সার মেশিন পিষে নিয়ে ছাকনি কিংবা নরম কাপড় দিয়ে রস ছেকে নিয়ে হবে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এটি সেবন করলে ভালো মিলবে,
• লেবু এবং হলুদ জল
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, লিভারের জন্য টক জাতীয় ফল বেশি উপকারী হয়, কারণ এজাতীয় ফল লিভার থেকে টক্সিন বের করতে বেশি সাহায্য করে,
এক গ্লাস কুসুম গরম জলে অর্ধেক লেবু রস নিয়ে তার সাথে অল্প পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে, হলুদ বাইল জুস তৈরিতে লিভারকে সাহায্য করে, এই লেবু ও হলুদ মিশ্রিত জল সকালে খালি পেটে খেতে হবে, এটি করলে লিভারের খারাপ টক্সিন বাইরে বের হবে লিভার পরিষ্কার থাকবে, এবং লিভারের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে,
• ভুঁই আমলা, আদা ও হলুদ
এখন যে রেমিডিটির কথা আমরা জানবো সেটা হলো ভেষজ উদ্ভিদ ভুঁই আমলা হলুদ ও আদার সংমিশ্রণ, ভুঁই আমলার পাতায় পটাশিয়াম থাকে প্রায় ০.৮৩% । এটি প্রায় সব জায়গাই হয়ে থাকে, পেটের সকল প্রকার ব্যাধি ঠিক করতে ভুঁই আমলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,
এটি প্রস্তুত করতে আধ কিলো ভুঁই আমলা মূল শুদ্ধ উপরে নিন, এবং পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন, এরপর ছোট ছোট করে কেটে নিন যাতে প্রেসার কুকারে ভরা যায়, প্রেসার কুকারে তিন লিটার জলের সাথে কাটা ভুঁই আমলা এক চামচ আদা ও এক চামচ হলুদ পাউডার ও পরিমাণ মতো নুন একত্রে করে নিন,
এরপর গরম করতে দিন একটা সিটি দেয়ার পর, উনুন থেকে নামিয়ে নিন, এবং প্রেসার কুকারের ঢাকনা না খুলে ১০ মিনিট পর আবার গরম করতে দিন, এবং একটা সিটি দেয়ার পর আবার নামিয়ে নিন, এবাবে ১০ মিনিট অন্তর অন্তর ৩ থেকে ৪ সিটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর, কুকার ঠাণ্ডা হবার পর ঢাকনা খুলে ছেকে নিন, এবং কাঁচের পাত্রে রেখে দিন, এখন ভুঁই আমলার লিভার টনিক টি তৈরি,
এটি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত খারাপ হবে না, এবার এটি সেবন পদ্ধতি টি হলো আধ কাপ এই ভুঁই আমলার টনিকের সাথে আধ কাপ জল মিশিয়ে নিতে হবে, সম্ভব হলে এর সাথে লেবুর রস ও মিশিয়ে নিতে পারেন, এটি দিনে ২ থেকে তিন বার খাওয়া যেতে পারে, একদিন পরেই আর ফলাফল লক্ষ্য করতে পারবেন, একমাস এটি খেলে লিভার দারুন ভাবে কাজ করবে ও পরিষ্কার হয়ে যাবে, লিভার সম্বন্ধীয় সকল প্রকার সমস্যা দুর করা সম্ভব হবে,
এই রেমিডি গুলোর মধ্যে যেটা আপনার পছন্দ সেটা প্রয়োগ করতে পারেন, ফ্যাটি লিভার কিংবা লিভার সিরোসিস এর সমস্যা থাকলে এগুলো ব্যাবহার করলে উপকার মিলবে, আর যদিও না কোনো রকম লিভারের সমস্যা থাকে তবুও উপরোক্ত লিভারের টিপস গুলো আপনি ১৫ দিনে একবার প্রয়োগ করতে পারেন, এতে লিভার সুস্থ থাকবে,
লিভার যদি ঠিক থাকে শরীরের সুস্থতার সাথে চুল, ত্বক, ডাইজেস্ট সিস্টেম, হার্ট, সব কিছু ভালো থাকবে, কারণ রক্তের অসুদ্ধতা ও খাবার ঠিক ভাবে পরিপাক না হতে পারার কারণেই বেশির ভাগ রোগ দেখা দেয়,