কিডনিতে পাথর হলো একটি গুরুতর অসুস্থতা, কখনো কখনো অসহ্য যন্ত্রণা হয়, এবং অনেক সময় কিডনি ফেইল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ কিডনির পাথরের সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
পৃথক পৃথক মানুষের কিডনির পাথরের আকার পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। সাধারণত ছোট পাথর উইরিন বের হওয়ার সময় বাইরে বের হয়ে যায়। কিন্তু বড়ো পাথর শরীর থেকে বাইরে বের হতে পারে না। আর উইরিন পাস হওয়ার সময় ব্যাথা এবং জ্বালা ভাব অনুভূত হয়।
Contents List
7 Home Remedies Treatment for remove Kidney stone in bengali
কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এবং কিডনিতে পাথর হলে এই সব খাবার গুলো সেবনের দ্বারা কিডনির পাথরকে বাইরে অপসারন করে দেওয়া যেতে পারে। সুতরাং আজকে আমরা এমন ৭টি ফলের কথা জানবো যেগুলো কিডনির পাথরকে অপসারণ করতে সাহায্য করবে।
চলুন এখন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কিডনির পাথর থেকে মুক্তি পেতে কোন কোন ফল গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. বেদনার জুস
অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে কিডনির পাথর সরাতে বেদনার জুস দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, এর জন্য প্রতিদিন বেদনার জুস সেবনের সাথে সাথে বেদনাকে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। এটিকে জুস হিসাবে এবং বেদনার দানাকে সরাসরিও খাওয়া যেতে পারে।
২. আপেলের জুস
দিনে দুই বার আপেল জুস নিয়মিত ভাবে সেবন করলে পাথর ধীরে ধীরে গলতে শুরু করবে, আর ইউরিন এর পথ দিয়ে বাইরে আসবে। এর জন্য এক কাপ কুসুম গরম জলে দুই চামচ আপেলের রস এক চামচ মধু মিশিয়ে রেগুলার দিনে দুবার সেবন করুন।
৩. অলিভ ওয়েল আর লেবুর রস
লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামের কারণে কিডনিতে তৈরি পাথরকে ভাঙতে ও গলাতে দারুন ভাবে কাজ করে। এটি প্রস্তুত করতে চার চামচ জলপাই এর তৈল আর চার চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। আর দিনে দুই থেকে তিন বার এটির ব্যবহার করুন। এটি সেবন করার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা দরকার। নিয়মিত ভাবে এটি সেবন করলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনি এর ফলাফল বুঝতে পারবেন।
৪. তরমুজ
তরমুজের মধ্যে জলের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, ক্যালসিয়াম এর দ্বারা তৈরি কিডনি স্টন এর উপাচার হিসাবে তরমুজ বিশেষ ভাবে কাজ করে। এর সাথে তরমুজ অতিরিক্ত মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া তরমুজ মজুত পটাশিয়াম ইউরিনে অ্যাসিড লেভেলকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৫. মটরশুটি
মটরশুঁটিতে বেশি পরিমাণে ফাইবারের মাত্রা থাকার কারণে কিডনি আর ব্লাডারের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কিডনির স্টন দূরীকরণের জন্য এটিকে যে ভাবে ব্যবহার করবেন তা হলো মটরশুঁটিকে গরম জলে হাল্কা আঁচে ততক্ষণ ফোটাতে যতক্ষণনা মটরশুঁটিগুলো নরম হচ্ছে।
এর পর জলটি ছেকে নিয়ে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এই জলটিকে দিনে বেশি পরিমাণে পান করার চেষ্টা করুন, পুরো চব্বিশ ঘন্টা পর্যন্ত এই জল পান করলে ভাল ফল মিলবে।
৬. পেঁয়াজ
কিডনির পাথরের জন্য পেঁয়াজ একটি মহাঔষধির ন্যায় কাজ করে। এর মধ্যে অনেক রকম ঔষধি উপাদান থাকে, পাকা পেয়াজের রস সেবন করলে কিডনির ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। দুটো পেঁয়াজ নিয়ে উপরিভাগের আঁশ ছড়িয়ে নিয়ে এক গ্লাস জলে অল্প আঁচে ভালো গরম করে নিন। কিছু সময় পর ভালো ভাবে গরম হয়ে গেলে, পেয়াজ মিশ্রিত জলকে ঠাণ্ডা করতে দিন।
এর পর গ্লাইন্ডার মেশিনে ভালো করে মশিয়ে নিয়ে রস ছেঁকে বের করে নিন। এই রস তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করলে খুব ভালো এবং শিগ্রহ ফল মিলবে।
৭. আঙ্গুর বা আঙুর ফল
প্রাকৃতিক মূত্র বর্ধক রূপে আঙ্গুর দারুন কার্যকরী একটি ফল। কিডনির পাথর অপসারণে আঙুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আঙ্গুরে পটাশিয়াম, লবণ, ও জল থাকে। এলবুমিন ও সোডিয়াম আঙ্গুরে খুব অল্প মাত্রায় থাকে, এই কারণে অঙ্গুরকে কিডনি পাথরের চিকিৎসায় উপকারী ফল বিবেচিত করা হয়ে থাকে।
কিডনি পরিষ্কার ও সুস্থ রাখার ঘরোয়া উপায়
আমরা শরীরের লিভারকে ঠিক রাখতে বেশি গুরুত্ব দিই, কিন্তু যদি কিডনির ঠিক মতো দেখভাল না করি তাহলে এটি একসময় অনেক বড়ো গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে দিতে পারে। তাই লিভার ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ গুলোর মতো কিডনি যাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি।
কেননা রক্তকে পিউরিফয়াই করে শরীরকে ইনফেকশন থেকে বাঁচানো এবং ইউরিন সম্বন্ধীয় সকল প্রকার ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে কিডনি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে কিছু টিপস আপনি এখন জানতে পারবেন, আর ভবিষ্যতে আসা নানান কিডনি রোগ গুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন। আমরা যতো প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারবো ততো রোগ থেকে মুক্ত হতে পারবো।
চলুন এখন জেনে নেই কিভাবে এই প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি কিডনির ঔষধি তৈরি করবেন।
ধনে পাতা এক মুঠো নিয়ে তার নিচের শিকড় গুলো বাদ দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন, একলিটার জলে অল্প আঁচে ১০ মিনিট পর্যন্ত ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তারপর শুকনো গোটা জিরা ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম ও পতি লেবুকে গোল করে পিস পিস করে কেটে নিয়ে ধনে পাতা ও জলের মধ্যে দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট গরম করে নিন।
এর পর ভালো করে জল ছেঁকে নিন, এবং দিনের যে কোনো সময় একবার খেতে পারেন। দুপুরে খাবার আগেও এটি সেবন করা যেতে পারে।
কিডনিকে পরিষ্কার করতে ধনে ভালো কাজ করে, ধনের মধ্যে থাকা ডেটক্সিফাই ইনগ্রেডিয়েন্টস কিডনিকে পরিষ্কার রাখে ও কিডনি সম্বন্ধীয় সকল প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে।
Kidney problems symptoms কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনি রোগের লক্ষণ জানবার আগে আমাদের এটা জেনে নেওয়া জরুরী কিডনি আমাদের শরীরে কি কাজ করে। কিডনি আমাদের শরীরের উৎপাদিত অবাঞ্ছিত পদার্থ, অতিরিক্ত লবণ, জল, রক্তকে ফিল্টার করে বাড়তি উপাদান গুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয় ইউরিনের মধ্যমে। ইয়রিন কিডনি দ্বারা উৎপাদন হয়ে ইউরিনারি ব্লাডার এ জমা হয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। আর এসবের কাজে সাহায্য করে কিডনি।
কিডনি রোগ দুই ধরনের হয়
১. ক্রনিক কিডনি ডিসিস – Chronic Kidney Disease(CKD)
এই রোগ দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে শরীরের কার্যক্ষমতা হ্রাস হতে থাকে। CKD এর পাঁচটি ধাপ হয়, যখন কিডনির কার্যক্ষমতা স্থায়ীরুপে ১০% এর থেকেও কম হয়ে যায় তখন এই অবস্থাকে কিডনি ফেইলইউর বলা হয়।
২. একিউট কিডনি ডিসিস – Acute kidney disease এই রোগ হটাৎ করেই আরম্ভ হয়ে খারাপের দিকে চলে যায়।
এই রোগের লক্ষণ এর নির্দিষ্ট কোনো রূপ নেই, কিডনির রোগের লক্ষণ অন্যান্য রোগের মধ্যেও পাওয়া যায়। এর মধ্যে মুখ্য রোগ গুলো হলো
- হাত পা ফুলে যাওয়া
- অত্যধিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা বোধ করা
- ক্ষুদা মন্দা, বমি বমি ভাব আসা
- ঠিক মতো ঘুম না হওয়া
- শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেওয়া
- ইউড়িনের সাথে প্রোটিন ও রক্ত বের হওয়া
এসব লক্ষণ গুলো কিডনির খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
এছারাও কিডনির রোগের সমস্যার মুখ্য কারণ হলো ডায়েবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, কিডনি স্টন ডিসিস ইত্যাদি।
আরও কিছু কিডনি র সম্বন্ধে জেনে নিন
মানবদেহের কিডনি কোথায় থাকে ?
মানুষের শরীরের মধ্যে নারী ও পুরুষের উভয়েরই দুটি কিডনি থাকে। এগুলোর অবস্থান হলো পেটের ভিতরে মেরুদন্ডের নিচের অংশে পিছন দিকের দুই পাশে দুটি কিডনি থাকে।