স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ খেজুরের উপকারীতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে আজকে আমরা অবগত হবো, খেজুর একটি মিষ্টি জাতীয় ফল বা খাদ্য দ্রব্য যেটা ড্রাই ফুড হিসাবেও পরিচিত, প্রতিদিন খেজুর খেলে এর অনেক রকম উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়.
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জনেই না কখন কিভাবে এবং কি পরিমান খেজুর খাওয়ার প্রয়োজন ও খেজুর বেশি খেলে কি হয়? যার কারণে খেজুরের পুরমাত্রায় ফল পাওয়া যায়না না, আর অনেক ক্ষেত্রে খেজুর খাওয়ার ফলে উপকারের পরিবর্তে অপকারিতা পরিলক্ষিত হয়.
তাহলে আসুন এখন আমরা খেজুর খাওয়ার সম্বন্ধে যে সকল বিষয় গুলি বিস্তারিত জানবো তা হলো.
Khejurer Upokarita Bangla
1. খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কখন? খেজুর কখন খাওয়ার দরকার ও কখন এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ,
2. খেজুর খাবার সঠিক নিয়ম
3. সারা দিন কি পরিমান খেজুর খাওয়া দরকার
4. খেজুর খাওয়ার ফলে কি কি উপকার হয়,
5. অধিক মাত্রায় খেজুর খেলে কি ক্ষতি হতে পারে এবং খেজুরের অপকারিতা,
সকলের মনেই প্রশ্ন জাগে খেজুরের মধ্যে এমন কি আছে যার কারণে খেজুরকে পুষ্টিকর খাবারের তালিকার মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে? আসলে খেজুর হলো সেই পুষ্টিগুণ ভরপুর উপাদান,
যাকিনা ১০০ গ্রাম খেজুরের মধ্যে আছে জল ২১.৩২ গ্রাম, সুগার ৬৬.৪৭ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৯৭ গ্রাম, ফাইবার ৬.৭ গ্রাম, কোলেস্টরল ৭৪.৯৭ গ্রাম, ফ্যাট ০.১৫ গ্রাম, এবং ক্যালরি এনার্জি আছে ২৭৭ কিলো,
এছাড়াও খেজুরে আছে আয়রন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস ও ভিটামিন অধিক মাত্রায় পাওয়া যায়,
সাধারণত তিন প্রকারের খেজুর পাওয়া যায় শুকনো খেজুর, ভেজা খেজুর ও অল্প শুকনো খেজুর,
• খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় কখন
কোন সময়ে আমরা খেজার সেবন করলে এর সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে পারি, সাধারণত খেজুর যেকোনো সময় সেবন করা যেতে পারে, তবে সকালে খালি পেটে খেজুর সেবন করলে তাত্ক্ষণিক শক্তি মিলবে, যা শরীরের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী,
এছাড়া যদি আপনি জিম কিংবা কোনো প্রকার শরীর চর্চার সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে জিম করার এক ঘন্টা আগে খেজুর খেলে অতিরিক্ত এনার্জি মিলবে,
এমন কিছু ব্যাক্তি আছেন যাদের খাবার খাওয়ার পর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে তারা অস্বাস্থ্যকর মিষ্টির পরিবর্তে প্রাকৃতিক খেজুর খতে পারেন,
খেজুর রাত্রিতেও সেবন করা যেতে পারে, যদি খেজুর এর সাথে এক গ্লাস গরম দুধ মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে এটি সুস্বাস্থ্য গঠনে ব্যাপক ভাবে সহায়তা করে,
• খেজুর খাওয়ার নিয়ম
যদি গরম কাল হয় তাহলে রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেবন করুন, এর ফলে খেজুরের মধ্যে যে গরম থাকে তা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়, এবং পুষ্টিকতাও বজায় থাকে,
শীতকালে খেজুর সরাসরি খাওয়া যেতে পারে, আরও ভালো ফল পেতে দুধের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে নিতে পারেন,
সাধারণ ভাবে খেজুর সকলেরই পছন্দের মিষ্টি একটি খাবার, যদি আপনি চান দুধের সাথে তিন থেকে চারটি খেজুর ও বাদাম মিশিয়ে সূপ তৈরি করেও সেবন করতে পারেন,
খেজুর খাওয়ার আর একটি উপায় হলো এটি আপনি স্যালাড এর সাথে যুক্ত করেতে পারেন, খেজুরের ছোট ছোট টুকরো করে স্যালাডের উপরে ছড়িয়ে নিন, এবং দুপুরে খাবার পর এই স্যালাড খেতে পারেন,
যাদের কোমরের ব্যথার সমস্যা আছে তারা ২ থেকে ৩টি খেজুর নিয়ে গরম জলে ভালো করে ফুটিয়ে নেওয়ার পর, দুই থেকে তিন গ্রাম মেথি দানার গুড়ো মিশিয়ে সেবন করতে পারেন, এটি নিয়মিত ভাবে কিছুদিন করলে কোমরের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে,
• সারাদিনে কি পরিমান খেজুর খাওয়া উচিত
একদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি এবং তার অধিক হলে পাঁচ থেকে সাত টি খেজুর সেবন করা যেতে পারে, আসলে খেজুর খাওয়ার সঠিক মাত্রা নির্ভর করে দেহের তাপমাত্রার উপর,
যদি আপনি ফিজিক্যাল এক্টিভিটি বা জিম করেন তাহলে একদিন ৫ থেকে ৭ খেজুর খেতে পারেন, এছাড়া যদি ওজন বাড়ানোর জন্য খেজুর খেতে চান তাহলে আধ লিটার দুধের সাথে পাঁচ থেকে সাতটি খেজুর ভালো করে ফুটিয়ে নিন, আর তার পর খেজুর গুলোকে আলাদা করে নিয়ে খেজুর গুলো প্রথম খেয়ে নিন এর পর দুধ সেবন করে নিন, এতে খুব তাড়াতাড়ি ওজন বৃদ্ধি পাবে,
যদি আপনি প্রত্যেকদিন খেজুর আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে চান তাহলে প্রথম প্রথম দুটো খেজুর দিয়ে শুরু করতে পারেন, পরে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারেন,
• প্রত্যেকদিন খেজুর খেলে কি হয়
খেজুরে ভিটামিন C এর মাত্রা অধিক পরিমাণে থাকে, আর ভিটামিন সি ত্বককে হেলদি রাখতে সহায়তা করে, এটি স্কিনকে কুঁচকে যাওয়া এবং রিঙ্কেল দূর করতে সাহায্য করে, আর ত্বককে উজ্জ্বল ও চকচকে রাখে,
গ্লুকোজ, ফ্রক্তোজ, আর সুক্রোজ খেজুরের মধ্যে পর্যাপ্ত মাত্রায় পাওয়া যায়, এই কারণেই খেজুর খেলে আমাদের শরীরে তৎক্ষণাৎ এনার্জি এসে যায়, এবং দেহের দুর্বলতা দুর হয়,
কম সোডিয়াম ও বেশি মিনারেল থাকার ফলে খেজুর আমাদের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে, এছাড়া সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনিজ, কপার বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় তাই প্রতিদিন খেজুর সেবন করলে হার শক্ত হওয়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে,
খেজুর আমাদের পাচন শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, খেজুরের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে যা পাচন প্রক্রিয়া কে সক্রিয় করার কাজে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে,
যারা কনস্ট্রিপেশন ও ইনডাইজেশন সমস্যায় আক্রান্ত তারা সারারাত খেজুরকে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেবন করলে ভালো ফল মিলবে,
যদি শরীরে আয়রন এর অভাব হয় তাহলে খেজুর সেবন করা অত্যন্ত জরুরি কারণ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে,
যাদের শরীরে অ্যানিমিয়া ও রক্তের অভাব জনিত ব্যাধি আছে তারা দুধের সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে,
মিষ্টি ফলে ভিটামিন B থাকে, তাই খেজুরের মধ্যে ভিটামিন বি সহজেই মজুত থাকে, যা আমাদের নার্ভাস সিস্টেম কে স্ট্রং করতে সক্ষম হয়, যারা খুব সহজেই ভয় পেয়ে যান বা অল্পতেই প্যানিক হয়ে পড়েন তাদের প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ক্ষুবই জরুরি, খেজুরের মধ্যে পটাশিয়াম থাকে তা আমাদের মস্তিষ্ককে এক্টিভ রাখতে সাহায্য করে,
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায় যা রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে, এর ফলে ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোল রাখতে সাহায্য করে, খেজুরের মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় তা হৃদরোগ সম্বন্ধীয় সকল প্রকার রোগ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখে, নিয়মিত রূপে খেজুর সেবন করলে হার্ট অ্যাটাক এর সমস্যা অনেকাংশে কম হয়ে যায়,
অনেকে খেজুরকে এনার্জির ভান্ডার বলে মনে করেন, খেজুরে এমন কিছু পৌষ্টিক তত্ত্ব পাওয়া যায় যা মা ও বাচ্চার জন্য খুবই কার্যকরী, তাই গর্ভবতী অবস্থায় নিয়মিত উপায়ে প্রতিদিন খেজুর সেবন করা দরকার, খেয়াল রাখতে খেজুর গর্ভবতী অবস্থায় বেশি মাত্রায় এটি সেবন না করা, এটি খাবারে যুক্ত করার আগে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরমর্শ নিন,
• খেজুর বেশি খেলে কি হয়?
উপরিক্ত বিষয় গুলি থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে খেজুরের নানাবিধ উপকার সম্পর্কে, কিন্তু কিছু জিনিস অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে উপকারের অপকারিতাও পরিলক্ষিত হয়, আসুন এখন আমরা জেনে নেব অধিক মাত্রায় খেজুর খেলে কি কি ক্ষতি বা অপকারিতা দেখা দিতে পারে,
1 খেজুরে ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে তাই সারাদিনে যদি বেশি পরিমাণে খেজুর খাওয়া হয় তাহলে পেটে ব্যাথা ও পাচন ক্রিয়ায় বাঁধা দেখা দিতে পারে,
2 অধিক পরিমাণে খেজুর খেলে কোনো কোনো ব্যাক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে, এবং স্কিনে উপরিভাগে র্যাশ দেখা দেয়,
3 প্রাকৃতিক ভাবে খেজুর মিষ্টি জাতীয় খাবার, আর এটি অধিক মাত্রায় সেবন করার ফলে ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসার এর মতো সমস্যা গুলো বেড়ে যেতে পারে,
4. খেজুরে পটাশিয়ামের মাত্রা অধিক পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, সুতরাং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেজুর খেলে শরীরে পটাশিয়ামের স্তর বেড়ে যেতে পারে, যা সুস্থ শরীরে জন্য একেবারেই ঠিক নয়,
তাই খেয়াল রাখতে হবে যে শুধু খেজুর নয় যে কোনো খাদ্য দ্রব্য সেবন করা হোক না কেনো, তা সঠিক পদ্ধতিতে, নিয়ম মেনে ও সঠিক পরিমাণে সেবন করা উচিৎ, যাতে আমাদের শরীর ওই আহার থেকে কেবল ভালো পুষ্টি গুলো গ্রহণ করতে সক্ষম হয়,