আজ আমরা অবগত হবো হলুদ এর গুনগত মানের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ও কাঁচা, গুঁড়া হলুদ খাওয়ার নিয়ম, পদ্ধতি, উপকারিতা, অপকারিতা, সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ন হেলথ টিপস,
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে হলুদ খাওয়ার স্বাস্থ্যউপকারিতা নিয়ে অনেক উপদেশ দেয়া হয়, এছাড়াও হলুদ আমাদের শরীরের জন্য কতো রকম কাজ করে তা হয়ত বাড়ির বয়স্কদের থেকে কিছু বিষয় আমরা কমবেশি সকলেই জনি,
কিন্তু হলুদ সেবনের ফলে আমাদের এর সঠিক কার্যকারিতা তখনি মিলবে যখন আমরা এটিকে সঠিক ভাবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিময় অনুযাযী সেবন করবো,
The benefits of eating turmeric In Bengali
এখন আমরা হলুদ খাওয়ার নিয়ে বিস্তারিত ভাবে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি জানবো তা হলো…
1. হলুদ সেবনের সঠিক নিয়ম
2. হলুদ খাবার সঠিক সময় কখন
3. হলুদ খাবার উপকারিতা গুলো কি কি
4. রোজ কি পরিমান হলুদ খাওয়া দরকার
5. কাদের হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ
হলুদ ছাড়া রান্নার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, হলুদ একটি উপাদান যেটা আমরা প্রতিদিনই রান্নার কা
জ ব্যবহার করে থাকি, যেকোনো তরিতরকারি তৈরি করা হোক না কে সর্বক্ষেত্রেই হলুদের প্রয়োজনীয়তা পরে, হলুদ কেবল খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ভাবে কাজ করে,
শুকনো হলুদের পরিবর্তে কাঁচা হলুদ বেশি লাভদায়ক হয়, হলুদের মধ্যে যেসকল উপকারী উপাদান গুলো থাকে তাহলো অ্যান্টি ইনফ্লামমটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, এছাড়াও ভিটামিন C, A, B6, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম জাতীয় পৌষ্টিক তত্ত্ব পাওয়া যায়,
কারকিউমিন নামক এক ধরনের সক্রিয় উপাদান হলুদের মধ্যে পাওয়া যায় যেটা আমাদের ইমিউনি সিস্টেমকে মজবুত রাখে,
• হলুদ সেবনের উপকরিতা
এখন আমরা জেনে নেব হলুদ সেবন করলে কি কি উপকার হয়,
1. হলুদ হলো একটি উষ্ণ প্রকৃতির উপাদান, এর মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল প্রপাটি থাকে যার কারণে এটি সেবনের ফলে সর্দি কাশি জ্বর ইত্যাদি অসুখ থেকে শরীরকে রক্ষা করে,
2. যদি দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে সেবন করা যায় তাহলে ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শরীর এটি দেহকে ফিট ও সুস্থ সবল রাখে, আর যখন তখন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে,
3. হলুদে অ্যান্টি বায়োটিক আর দুধে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে হাড়ের চোট ও ব্যাথা নিরাময় করতে হলুদ ও দুধ একত্রে সহায়তা করে,
4. যারা কোমরের ব্যথা, গাঠের ব্যাথা জনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত তারা হলদি মেথি দানা গুঁড়া ও আদা গুঁড়া এক সাথে মিশিয়ে নিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় এক চামচ করে দুধ বা গরম জলের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে,
5. শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে হলুদ এর পাউডার ব্যহবার করলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে, কারণ হলুদে অ্যান্টি বায়োটিক, অ্যান্টি সেফটিক, অ্যান্টি ইনোফ্লোমট্রি থাকে যার ফলে ক্ষত স্থান তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে,
6 দাদ, চুলকানি, পিম্পিলস এর সমস্যা থাকলে নিম পাতা আর কাঁচা হলুদের পেস্ট বানিয়ে ওই স্থানে লাগলে এটি অনেক ভালদায়ক হবে,
7. মুখের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে ও ফর্সা করতে কাঁচা হলুদের সাথে মধু বা দুধ মিশিয়ে মুখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন, এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করলে এর ফলাফল নিজেই বুঝতে পারবেন,
8. দাঁত সম্বন্ধীয় কোনো সমস্যা যেমন দাঁতে ব্যথা, পোকা লাগা, এবং পাইরিয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকলে সরিষার তেলের সাথে হলুদ মিশিয়ে দাঁতে হাল্কা করে আঙ্গুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন, এর পর কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ ওয়াশ করে নিন,
9. যাদের মুখের দুর্গন্ধ ছড়ায় তারা এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ হলদি পাউডার মিশিয়ে মুখ ওয়াশ করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া দূর হবে,
10. লিভার কে ডিটক্স করতে হলুদ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, হলদির মধ্যে যে কারকিউমিন নামক যে কম্পাউন্ড থাকে তা যকৃৎ কে স্ট্রং রাখতে সাহায্য করে, নিয়মিত ভাবে কুসুম গরম জলের সাথে হলুদ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে সেবন করলে শরীর থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থ নিঃসরণ করে এবং দেহে টক্সিন মাত্রা হ্রাস করে, যা লিভার এর সাথে সাথে দেহিকেকেও সুস্থ সবল রাখে,
11. হলদিকে অ্যান্টি ক্যান্সার বলা হয়, রিসার্চ অনুযায়ী হলদিরর মধ্যে যে কারকিউমিন নামক তত্ত্ব আছে তা ক্যান্সার এর সেলস্ গুলোকে বৃদ্ধি করতে বাঁধা দেয়, যদি ক্যান্সারের প্রথম স্টেজ হয় তাহলে হলুদ এর সঠিক ব্যবহার বা সেবন করলে অনেকাংশে ক্যান্সার সারিয়ে তুলতে সম্ভব হয়, এই কারণে কাঁচা হলুদ ক্যান্সার রোগীদের জন্য একটি মহাওষধি বলে মনে করা হয়,
12. স্মৃতি শক্তি হ্রাস হয়ে যাওয়া বিশেষ করে বয়স্ক ব্যাক্তিদের মধ্যে এটি পরিলক্ষিত হয়, তারা হলুদ জল সেবন করতে পারেন, এটি ব্রেনের মেমোরি ফাংশন কে স্ট্রং রাখতে সাহায্য করে,
13. হৃদপিন্ড সুস্থ রাখতে হলুদ কাজ করে, হলুদ হৃদপিন্ডের মাংসপেশীকে সুস্থ রেখে রক্ত প্রবাহের কাজকে স্বাভাবিক করে, তাই নিয়মিত পদ্ধতিতে হলুদ জল সেবন করলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, আর এর সাথে সাথে শরীরের কোলেস্টরল সমস্যা কমায়, যার কারণে হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা সঠিক ভাবে চালনা করতে সক্ষম হয়,
উপরের বিষয় গুলো থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে হলুদ খেলে কি কি উপকার হয়, কিন্তু তখনই আমরা সম্পূর্ণভাবে হলুদ খাওয়ার লাভ পেতে পারবো যখন এটি খাওয়ার সঠিক সময় ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হবো, আসুন তাহলে এখন জানবো
• হলুদ খাওয়ার সঠিক সময় ও পদ্ধতি
দিনের যেকোনো সময়ে হলুদ সেবন করা যায়, কিন্তু প্রতিটি ব্যাক্তির শরীরের প্রকৃতি ভিন্ন হয়, আর আপনি কি করণের জন্য হলুদ সেবন করতে চাইছেন তার উপর নির্ভর করে,
যদি আপনি সকালে খালি পেটে হলুদ জল সেবন করেন তাহলে ডাইজেশন সিস্টেম স্ট্রং থাকবে, এর জন্য এক গ্লাস জলে এক চামচ ন্যাচারাল হলুদ পাউডার মিশ্রিত করে নিন, এর পর এটি ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করুন, এই পানিয়টি শরীরের জন্য খুবই লাভদায়ক হবে,
দুপুরে স্যালাড এর সাথেও আপনি হলুদ এর সেবন করতে পারেন, কাঁচা হলুদকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে শসা, টমেটো এর সাথে লেবু রস মিশিয়ে খেতে পারেন,
এছাড়া দুপুরে খাবার পর হলুদ এর আচার তৈরি করে সেবন করা যেতে পারে, এটি প্রস্তুত করতে হলুদেকে ছোট ছোট টুকরো করে তার সাথে পতি লেবু মিশিয়ে এটি আচার রূপেও সেবন করা যেতে পারে, এটি খেলে পেটের সমস্যা দুর হবে, এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে,
রাতে শোবার আগে হলুদের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী, দুধে ট্রিপটোফেন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, তাই হলদি দুধ একত্রে সেবন করলে এটি দেহের ট্রেস দুর করে এবং ভালো ঘুম দিতে সাহায্য করে,
দুধ হলুদ এর এই রেমিডি টি তৈরি করতে একগ্লাস দুধের সাথে এক চামচ হলুদ পাউডার মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে এটি সেবন করুন, যদি মিষ্টি দুধ পছন্দ করেন তাহলে চিনির পরিবর্তে গুর কিংবা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন,
• কাঁচা ও গুঁড়া হলুদ খাওয়ার নিয়ম
দিনে কি পরিমাণ হদুল খাওয়া প্রয়োজন পড়ে সে বিষয়ে এখন আমরা জেনে নেব,
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তি ১০ থেকে ২০ গ্রাম কাঁচা হলুদের রস খেতে পারেন, এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৫ গ্রাম এর বেশি না হয়,
যদি গুঁড়ো হলুদ এর সেবন করেন তাহলে বয়স্করা দের ৫ থেকে ১০ গ্রাম নিতে পারেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অধ গ্রাম দিতে পারেন,
অনেকে মনে করেন হলুদ একটি গরম জাতীয় খাদ্য দ্রব্য তাই এটি গ্রীষ্ম কলে না খাওয়াই ভালো, তবে এটি একটি ভুল ধারণা গ্রীষ্ম এবং শীত এই দুই কলেই হলুদ খাওয়া যায়, কেবল গ্রীষ্মকালে এর পরিমাণ কম করে দিতে হবে,
• হলুদ খাওয়ার অপকারিতা
প্রত্যেকের শরীরের আলাদা আলাদা হয়, তাই কোন ব্যাক্তির হলুদ খাওয়া উচিৎ নয় এবং কি কি পরিস্থিতে হলুদ খাওয়া বাদ দিতে হবে তা নিয়ে এখন আমরা জেনে নেব,
1. গর্ভাবস্থায় হলুদ খাওয়া বর্জন করা দরকার, এই অবস্থায় হলুদ সেবন করলে ক্ষতি হতে পারে,
2. যদি কোনো প্রকার গরম জাতীয় ব্যাধি থাকে যেমন জন্ডিস ইত্যাদির মতো রোগ রোগ থাকে তাহলে হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন,
3. যদি কোনো রকম সার্জারি বা অপারেশন করাতে যাবেন এই অবস্থায় কিছুদিন আগে থেকে হলুদ খাওয়া বন্ধ রাখতে পারেন,
4. শরীরে রক্তের পরিমান কম থাকলে বা অ্যানিমিয়া রোগীদের হলুদ খাওয়া উচিৎ নয়, কারণ হলুদ আমাদের শরীরে আয়রন উৎপন্ন করার কাজ কম করে দেয়, যার ফলে শরীরে রক্ত জনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে,