আজ এই পোস্টটির মাধ্যমে আমরা অবগত হবো হজম শক্তি বৃদ্ধির সঠিক উপায় কি, এবং কি ভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে হজম শক্তি বাড়ানো যায় এবং খাদ্য সঠিক ভাবে পরিপাক বা পাচন না হওয়ার বিভিন্ন কারণ ও তার সমাধান,
আমরা সবাই মনে করি হজম কেবল আমাদের পাকস্থলী দ্বারা হয়, কিন্তু পরিপাক বা হজম একটি জটিল ও মিশ্রিত প্রক্রিয়া, যেইমাত্র খাদ্য আমাদের মুখ গহ্বরে যায় তখনি হজম করার কাজ শুরু হয়ে যায়,
আর এই পরিপাক বা হজম করার কাজ শরীরের যেসব পার্ট গুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয় সেগুলো হল…
1 পক্বাশয় বা পাকস্থলী – stomach
2 লালা গ্রন্থি – salivary gland
3 ক্ষুদ্রান্ত্র – small intestine
4. বৃহদন্ত্র – large intestine
5. যকৃৎ বা লিভার – Liver
6 অগ্ন্যাশয় – pancreas
7. খাদ্যনালী – esophagus
8 দাঁত – teeth
9. বৃহদন্ত্রের শেষ অংশ – rectum
Contents List
হজম শক্তি বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
শরীর নিয়ে আমাদের সকলেরই আলাদা আলাদা লক্ষ্য থাকে যেমন পেশী বানানো, ওজন কমানো ও বৃদ্ধি করা, সাধারণ ফিটনেস ইত্যাদি, স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করতে আমরা সবসময় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর আহার গ্রহণ করে থাকি, কিন্তু আমরা কি এটা জনি? যে খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে সেই খাদ্যকে সঠিক ভাবে হজম করা বেশি জরুরি,
যদি খাবার ঠিক ভাবে পরিপাক না হয়, তাহলে সেই খাবার থেকে শরীর নিউট্রিয়েট শোষণ করতে সক্ষম হয় না, আর তার প্রভাব পড়ে শরীরের উপর, এমনকি আমাদের 90% রোগ হয় খাবারের সঠিক হজম না হওয়ার কারণে,
বদহজম বা হজম না হওয়ার কারণ
এখন জানবো হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারণ, আমাদের সকলেরই মধ্যেই এমন কিছু অভ্যাস থাকে যে অভ্যাস গুলোর কারণ সম্বন্ধে আমরা অবগত নই, আর এর ফলেই পরিপাক পক্রিয়া খারাপ হতে থাকে,
প্রথমত: খাবার সঠিক ভাবে না চিবানো
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা খাদ্য দ্রব্য ভালো করে চিবিয়ে খাই না, যার কারণে পাচনতন্ত্র সঠিক কাজ করতে পারেনা, এবং পর্যাপ্ত এনজাইম প্রস্তুত করতে পারে না ঐ খাবারকে হজম করানোর জন্য, ফলে পাচনতন্ত্রকে অনেক বেশি কাজ করার আবশ্যকতা পড়ে, আর পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে,
আবার খাবারের মধ্যে যেসব ভিটামিন ও মিনারেলের থাকে সেগুলোকেও শরীর ভালো করে শোষণ করতে পারে না, তাই যতোই ব্যস্ততার মধ্যে থাকা হোক না কেনো খাবারকে অন্তত 32 বার চিবিয়ে তার পর খাওয়া উচিৎ,
দ্বিতীয়ত: খাওয়ার পরপরই স্নান না করা
তাড়াহুড়ো করে অনেক সময়ই খাবার খাওয়ার পরেই অনেকেই স্নান করতে চলে যায়, এটা করা কখনোই উচিৎ নয়, কারণ আমরা যেসব খাদ্য খাই সেগুলকে হজম করতে দেহে অনেক বেশি এনার্জি প্রয়োজন পরে, আর পাকস্থলীর চারিধারে রক্তের প্রবাহের দরকার হয়,
স্নান করার পর শরীরের তাপমাত্রা কম হয়ে যায়, যার কারণে পাকস্থলীর চারপাশের রক্ত দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যার কারণে হজম কম হতে থাকে, তাই স্নান করার পরে খাবার খান কিংবা খাবার গ্রহণের এক ঘণ্টা আগে স্নান করা উচিৎ,
তৃতীয়ত: বেশি ঠাণ্ডা জল পান না করা
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা জল খেলে রক্তনালী সংকুচিত হয়, আর সঠিক ভাবে রক্ত প্রবাহ না হতে পারায় পাচনতন্ত্রের কাজ করতে বাধা প্রাপ্ত হয়, খাবার ভালোভাবে হজম হতে পারে না, তাই বেশি শীতল জল পান করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন, এবং ঘর তাপমাত্রা জল পান করা ও যদি সম্ভব হয় দিনে দুই থেকে তিন বার হাল্কা বা কুসুম গরম জল খাওয়া যেতে পারে, এতে হজম প্রক্রিয়ার কাজ ভালো হয়,
চতুর্থত: খাবারের অনিয়মিত সময় বা খাবার বাদ দেওয়া
এখনকার ব্যস্ততায় ভরা জীবনে বেশিরভাগ মানুষই নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ করে না বা আহার ছেড়ে দেয়, যার কারণে মেটাবলিক রেট কম হয়ে আসে এবং খাবার সঠিক ভাবে পরিপাক হতে পারে না,
যদি দিনের সঠিক সময়ে খাওয়া বাদ পরে তাহলে শরীরে কর্টিসল স্তর বৃদ্ধির পেতে থাকে, আর বেশি ট্রেস অনুভব হতে থাকে, এসব কারণে হজম এর কাজে ব্যাঘাত ঘটে এবং এর সাথে সাথে স্টমাক আলসার ও অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে,
তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে দিনের সঠিক খাবার সময়ে গ্রহণ করা খুবই দরকার, ও ট্রেস কমাতে বিভিন্ন মেডিটেশন, ব্যায়াম প্রভৃতি সাহায্য নেওয়া যেতে পারে,
পঞ্চম: আহার গ্রহণের পরেই জল না খাওয়া
অনেক ব্যাক্তি খাবার পরেই এবং খাবার খাওয়ার সময় জল পান করে ফেলেন, যা হজম না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ, এর ফলে হজম রস যা খাদ্য পরিপাকে করতে সাহায্য করে তা ডাইলুড হতে শুরু করে, ও পাচন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পরে, এবং হজম হতে সমস্যা হয়,
সুতরাং খাবার খাওয়ার ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট পর জল পান করা উচিৎ, যদি এটি করতে সমস্যা হয় তাহলে খাবার কিছুক্ষণ পূর্বে জল পান করে নিতে পারেন, তাহলে খাওয়ার সময় ও খাবার পরেই জল খাওয়ার আবশ্যকতা পড়বে না,
ষষ্ঠ: অশুভ খাবার না খাওয়া
কিছু খাবার আছে যেগুলো খুবই সুস্বাদু কিন্তু এগুলো আমাদের শরীরে জন্য কোনো লাভ দায়ক নয়, এমন খাবার গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকুন, যেমন অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, তৈলাক্ত বা তেলে ভাজা খাবার, সঞ্চিত খাবার, জাঙ্ক ফুড এসব জাতীয় খাবার হজম শক্তি কে অতিরিক্ত মাত্রায় দুর্বল করে তোলে,
বদহজম হওয়ার বা হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ, যেগুলো সকলেরই প্রায় জানা যেমন পেটে ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, বিমি ভাব ইত্যাদি, এছাড়াও এমন কিছু সিমটম আছে যার দ্বারা বোঝা যায় যে হজম ঠিক মত হয়নি, যেমন দেহে থেকে ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দুর্গন্ধ বের হওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি বের হওয়া ইত্যাদি,
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও সমাধান
এখন আপনি জানতে পারবেন হজম শক্তি বৃদ্ধি করার কিছু ঘরোয়া টিপস ও উপায়, যার দ্বারা পরিপাক প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হয়ে যাবে, পরিপাক পক্রিয়া ঠিক রাখতে আমরা বিভিন্ন হজম শক্তি বৃদ্ধির ওষুধ, ট্যাবলেট, এবং সিরাপ এর সাহাজ্য নিয়ে থাকি, কিন্তু এমন কিছু হজম শক্তি বৃদ্ধির খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত সেবনের ফলে হজম পক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব,
1. যদি সকালে উঠে খালি পেটে কুসুম গরম এক গ্লাস জলের সাথে এক চামচ ত্রিফলা গুড়া পান করা যায় তাহলে হজোম শক্তি বৃদ্ধি পাবে, এবং যদি এটি এক মাস নিয়মিত ভাবে সেবন করেন তাহলে হজম ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে দেহে বয়সের ছাপ পড়া কম হবে, চোখ ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে,
হজম শক্তি বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো সকালে উঠে এক গ্লাস জলে জিরে মিশিয়ে জলটিকে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করার পর, অল্প পরিমাণ গরম থাকা অবস্থায় পান করলে এটি হজমে সহায়তা করে,
2. দই এর সাথে অল্প চিনি মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়,
3. হলদি দুধ এর বিষয়ে সকলেরই প্রায় জানা আছে, কিন্তু আপনি কি জানেন হলদির সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে হজমের সমস্ত রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব,
4. খাবার খাওয়ার পর জোয়ান বা মৌরি খেলে এটি খাবার গুলোকে পাচিত করতে সহায়তা করে, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়,
5. সকালে সকালে খালি পেটে অল্প গরম একগ্লাস জলে এলোভেরা জুস ও আমলকী রস মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এর ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়,
6. যারা অনেক বেশি হজম জনিত সমস্যায় ভোগেন তারা চেয়ারের পরিবর্তে নিচে বসে খেলে হজম ভালো হয়, এছাড়াও ভালোভাবে হজম হওয়ার জন্য ভালো ঘুমের খুবই প্রয়োজন, ঘুম ভালো হলে ট্রেস কম থাকে এবং মেটাবলিক রেট স্বাভাবিক থাকে, এবং হজমে সহায়তা হয়,
7. হজম ঠিক রাখতে ফাইবারের প্রয়োজন পরে, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ফাইভার জাতীয় খাবার খাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাদের জন্য রাত্রে একগ্লাস গরম দুধের সাথে ইসব গুল মিশিয়ে খেলে, হজম ভালো হবে,
8. পর্যাপ্ত পরিমাণ জল হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তাই দিনে অন্তত ৮ থেকে ১২ গ্লাস জল পান করা দরকার, বেশি জল খাওয়ার ফলে খাবার ভালো ভাবে ভাঙতে পারে, সারা শরীরে ভালোভাবে পুষ্টি সরবাহ হয়, এর ফলে ডাইজেশন স্ট্রং হয়,
9. হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে উপরের বলা ঘড়য়া উপায় গুলো ব্যবহার করার সাথে শারীরিক দিক থেকে সক্রিয় থাকাটাও খুব জরুরি, দীর্ঘদিন ধরে যারা হজমের সমস্যায় ভোগেন তারা এই তিনটি হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম বা যোগাসন গুলোর সাহায্য নিতে পারেন যেমন উত্থাসন, সেতু বন্ধাসন, এবং বজ্রাসন, এই আসনটি খাবার আহারের কিছু সময় পরই করা যেতে পারে,
আশা করি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বা পরিপাক প্রক্রিয়া বাড়াতে এই ডাইজেশন সম্বন্ধীয় উপায় এবং টিপস গুলো সকলের কাজে আসবে, ধন্যবাদ;