স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা কেবল দেহের সাথে সম্পর্কিত নয়, এটা মন, চুল, ত্বক বা স্কিন, অভ্যন্তরীণ অঙ্গের উপরেও নির্ভর করে, তাই আজকে আমরা জানবো ছেলেদের জন্য ত্বক বা চামড়া যত্নের জন্য কিছু টিপস ও ট্রিকস এবং স্কিন কেয়ার রুলস সম্পর্কে,
ছেলেদের ত্বকের যত্নের জন্য এখানে আপনি এমন তিনটি স্কিন কেয়ার প্যাক সম্বন্ধে অবগত হবেন যেগুলো ঘরে বসেই প্রস্তুত করতে পারবেন, এবং এগুলো সম্পূর্ণ রূপে প্রাকৃতিক, এর সাথে সাথে আপনি আরও জানতে পারবেন ত্বক ভালো রাখতে কোনো বিষয় গুলো করা ঠিক নয় ও কোন গুলো করা সঠিক,
Skin Care Tips For Men In Bengali
যেকোনো ত্বকের যত্ন নিতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার ত্বক কি প্রকৃতির, আর জন্য আপনি অনেক ধরনের টেস্ট করতে পারেন, কিন্তু স্কিনের ধরন জানার জন্য সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ উপায় হলো,
1 অয়েলি বা তৈলাক্ত ত্বক
ভালো করে মুখ ফ্রেশ ওয়াশ বা ধুয়ে নেওয়ার পর, শুকনো হতে দিন, কোনো রকম স্কিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার না করে, ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর যদি দেখেন পুরো মুখ চকচক করছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্কিন অয়েলি বা তৈলাক্ত,
2. শুষ্ক ত্বক
যদি মুখ ফ্রেশ ওয়াশ পর রাফনেস বা চেরা চেরা দাগ লক্ষ্য করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্কিন শুষ্ক, বা ড্রাই স্কিন,
3. সাধারণ ত্বক
যখন একিই ভাবে ফ্রেশ ওয়াস করার ১ ঘণ্টা পর, স্কিনে রাফনেস এবং অয়েলি কিছুই দেখা যাবে না তাহলে আপনার স্কিন সাধারণ,
4. স্কিনের এই তিনটি ধরন ছাড়াও ত্বকের আরেক টি প্রকৃতি লক্ষ্য করা যায়, সেটা হলো তৈলাক্ত এবং শুষ্ক ত্বকের সংমিশ্রণ, এটা বোঝার উপায় হলো কপাল ও নাকের উপরের চামড়া তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া,
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের স্কিন চার ধরনের হয়ে থাকে, এবং তার উপর ভিত্তি করে স্কিনের যত্ন নেওয়া যেতে পারে, তবে এখানে আজ আপনি যে তিনটি স্কিন কেয়ার টিপস ও ফেস প্যাক এর কথা জানতে পারবেন সেগুলো সব ধরনের স্কিনের জন্যই প্রযোজ্য ও কার্যকরী,
1. কফি এন্ড মিল্ক মাস্ক
এটি প্রস্তুত করতে কফি গুড়ো এক চামচ পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ নিতে হবে, যাতে কফি ও দুধের মিশ্রণের পর পেস্ট তৈরি হয়, এবার ভালো করে মুখের ত্বক ফ্রেশ করার পর হালকা মেসেজ দ্বারা লাগিয়ে নিতে হবে, ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর, সাধারণ জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন,
কফিতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যেটা পিম্পল এবং ব্রণ দুর করতে সাহায্য করে, এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, কফি প্যাক লাগানোর আরেকটি ভালো দিক হলো এটা ড্রক সার্কেল রিমুভ করতে সহায়তা করে, এবং মুখের ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখে,
এবং এর সাথে দুধে ভিটামিন A থাকে যেটা ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সক্ষম হয় এবং দুধ ত্বক থেকে অ্যাকসেস অয়েল দুর করে,
এই ফেস প্যাক টি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করা যেতে পারে, এটি করলে স্কিন রিঙ্কেল ফ্রি থাকে আবিং ত্বক কুচকে যাওয়া দূরে সরিয়ে রাখবে,
2. এলোভেরার জেল মাস্ক
একটি পাত্রে অল্প পরিমাণ কাঁচা এলোভেরা থেকে জেল বের করে নিয়ে তার সাথে ৩ চামচ গোলাপ জল, ২ চামচ নারকেল তেল, এবং ১ চামচ লেবুর রস নিতে হবে, এরপর এইগুলোকে এক সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে, ভালো ফল পেতে হলে এটিকে রাত্রিতে শোবার আগে লাগাতে পারেন, এবং সকালে ওঠে জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন,
এলোভেরার জেল পুরুষ ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, এতে থাকে এন্টি মাইক্রবেল প্রপাটিস, এটি স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে, এলোভেরা রসে থাকে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন A, C, E. অ্যালোভেরা স্কিনের কোলাজেন কে রিপেয়ার করে যেটা হলো স্কিনের প্রাইমারি প্রোটিন,
এই প্যাকটি ব্যবহার করার তিন চার দিন পর থেকেই আপনি এর ফলাফল লক্ষ্য করতে পারবেন, স্কিন উজ্জ্বল চকচকে ও স্মুথ হয়ে উঠবে এবং ত্বক ফর্সা হয়ে উঠবে, ও ত্বকে যদি কোন দাগ ছোপ থাকে সেগুলো ধীরে ধীরে অপসারণ হয়ে যাবে,
3. আলমন্ড এক্সফোলিয়েটার মাস্ক
অল্প পরিমাণ কাঁচা দুধের সাথে ৫ থেকে ৬ আলমন্ড বাদাম রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, সকালে উঠে বাদামের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে, দুধের সাথে ভালো করে বাদাম গুলোকে পিষে মিশিয়ে নিতে হবে, পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে, এবার এটি ভালো করে স্কিনের উপর ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন, এবং ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর, জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন,
এই ফেস প্যাক টি ডেড স্কিন টোনার হিসেবে কাজ করবে, এটি সপ্তাহে যদি একবার ব্যবহার করা যায়, তাহলে সূর্যের তাপে খারাপ হয়ে যাওয়া স্কিন কে রিপেয়ার করতে সাহায্য করবে,
ছেলেদের ত্বকের যত্নে করণীয়
এখন আমরা জেনে নেবো কি কি এমন উপায় আছে যেগুলো ত্বককে ভালো রাখতে ও রক্ষা করতে দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করা প্রয়োজন,
প্রথমত: কর্ম ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাই বাইরে যাওয়ার সময় সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সান্স ক্রিম ব্যবহার করা প্রয়োজন,
দ্বিতীয়ত: স্কিনকে হেলদি রাখার জন্য ডেলি রুটিন মেনে চলা জরুরি, যেমন হলো CTM অর্থাৎ ক্লিনিক টোনিং এন্ড মঈশ্চারাইজিং, প্রতিদিন কোনো হাল্কা ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা, স্কিন টোনিং এর জন্য গোলাপ জল ব্যবহার করা ও ত্বকেকে সবসময় মিশ্চারাইজ রাখা,
তৃতীয়ত: কোনো ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি বা শারীরিক কার্যকলাপ করার পর ত্বককে পরিষ্কার রাখা, স্কিনকে লং লাইফ হেলদি রাখতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নেওয়া প্রয়োজন,
চতুর্থত: ত্বক ভালো রাখতে কিছু খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা দরকার যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, বাদাম, গ্রীন টি, মধু, কমলা লেবু, বেদনা, পামল শাক, রসুন, হলুদ, পাতি লেবু প্রভৃতি,
পঞ্চমত: আবার অন্য দিকে ত্বককে হেলদি রাখতে যেসব খাবার বর্জন করা দরকার সেগুলো হলো সর্বপ্রথম ধূমপান, এর নিকোটিন রক্তনালী সংকীর্ণ কোরে তোলে ফলে রক্ত সঞ্চালন কম হতে থাকে, যার কারণে কোলাজেন উৎপাদন এ খারাপ প্রভাব পড়ে,
ষষ্ঠত: চিনি জাতীয় খাবার এর মাত্রা কম করতে হবে, বেশি সুগার বা চিনি সেবনের ফলে কোলাজেন ফাইভার স্টেপ হয়ে যায়, আর এটি সহজে রিপিয়ার হতে পারে না, যার কারণে স্কিন ড্যামেজ হয়ে যেতে থাকে, এই প্রক্রিয়াকে গ্লাইকেশন বলে,
সপ্তমত: স্কিনকে হেলদি রাখার জন্য ট্রেস চিন্তা কম করতে হবে, বেশি চিন্তা করার ফলে কর্টিশল লেভেল বেড়ে যায়, আর কর্টেশল এর মাত্রা বৃদ্ধি র কারণে স্কিন অয়েলি হয়ে যায়, আর তৈলাক্ত ত্বক বেশি তাড়াতাড়ি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই ত্বক ভালো রাখতে চিন্তা কে নিয়ন্ত্রন করা খুবই জরুরি,
অষ্টমত: এমন কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট আছে যার মধ্যে ক্ষতিকারক প্যারাবিন, সালফেট থাকে, এরকম স্কিন কেয়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে,
যদি দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকম ত্বকের সমস্যা বা রোগ থাকে তাহলে অবশ্যই কোনো ডার্মটলজিস বা চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন,