মানুষের চিন্তা ভাবনা এবং কর্ম অনুসারে তার জীবন গড়ে ওঠে। মানুষের প্রগতি এবং ভবিষ্যৎ তার বিচার ধারার উপরই নির্ভরশীল থাকে। বীজ যেমন হবে, চারাগাছও তেমনই জন্মাবে। যার যেমন বিচার ধারা, তার কর্মও সেই অনুযায়ী হবে এবং যেমন কর্ম করা হবে, তেমনইপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
এই কারণেই বলা হয়েছে, মানুষ পরিস্থিতির নয়, সে তার নির্মাতা, নিয়ন্ত্রক ও স্বামী এবং দাস, যে কোন কার্যের মূল রূপ হল বিচারধারা। সময়ের মত বিচার ধারাকেও সদ্ প্রয়োজনে নিরত রাখা দরকার। পরিকল্পিত ভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার করে যেমন সাফল্যলাভ করা যায়, ঠিক তেমনই সুবিন্যস্ত বিচারধারাকেও অভীষ্টলক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত করে লাভান্বিত হওয়া সম্ভব।
বিচার সংযমের সঠিক স্বরূপ হল – চিন্তা ভাবনার প্রত্যেকটি তরঙ্গকে গঠনমূলক দিশাধারায় প্রবাহিত করার উপযুক্ত পুরুষার্থ। মানুষের বিচার ধারা তার ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব বিস্তার করার সাথে সাথে অপরের জীবনে , তার সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপরেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
মানুষের বক্তিত্ব তার চিন্তা ভাবনা, হাবভাব, আচার ব্যবহার এবং চেহারায় ফুটে ওঠে। কোন ভাল কাজ যদি না করতে পার, তাহলে অন্ততপক্ষে দূষিত বিচার ধারাকে প্রশ্রয় দিও না।
Life Changing Motivational Thoughts in Bengali
চেষ্টা কোরো যাতে তোমার মনে অপরের প্রতি দয়া , উদারতা, সহায়তা, সেবা এবং স্নেহপূর্ণ বিচারধারাই জেগে ওঠে এবং পরিপুষ্টতা লাভ করে। কারোকে মানসিক দিক দিয়ে দুর্বল করে দিও না। কারো মনকে নিষ্ক্রিয় করে দিও না। কাউকে দীন হীন করে দিও না এবং তাদের প্রতি তেমন ধরণের চিন্তা ভাবনাকেও মনে স্থান দিও না।
তোমার নিজেকে এমনই এক ব্যক্তিরূপে গড়ে তোলা উচিত, যাকে সাফল্যের প্রতিমূর্তি বলা চলে। যে অপরের সহায়ক হবে, অপরকে তুলে ধরার কাজে যত্নশীল হবে, অপরকে সহায়তা করবে, অপরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে পরিচালিত করবে। চেষ্টা করো যাতে নিজের ভিতরে আশার আলো জেগে ওঠে , উদারতার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং অনুৎসাহীদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার হয়।
তুমি যেন সর্বদাই স্নেহের এবং প্রেমের মৃদুমন্দ বাতাস ছড়িয়ে দিতে পার, যাতে মানুষের জীবনে আনন্দের সঞ্চার হতে পারে। সঠিক বিচার ধারা গঠন করার বিষয়ে সাহিত্যের বিশেষ অবদান থাকে। আমরা যে ধরণের সাহিত্য অধ্যয়ন করব, আমাদের বিচারধারাও তদনুরূপ গড়ে উঠবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবেই সম্ভব আমাদের এমন সাহিত্যের সন্ধান করতে হবে যা প্রেরণাদায়ক এবং আলোর দিশাদান করতে সক্ষম। পড়বার জন্য অন্তত পক্ষে একঘণ্টা নিয়মিত সময় নির্ধারিত করবে। পড়বার সময় ধীরে সুস্থে বুঝে শুনে পড়া উচিত। পড়ার পর তাতে সন্নিহিত বিচারধারাগুলি নিয়ে নিরন্তর চিত্তন মনন করা দরকার।
যখনই অবসর সময় পাবে, যখনই মন ও মস্তিষ্ক খালি থাকবে, তখনই আজকের স্বাধ্যায়ে যা কিছু পড়া হয়েছিল এবং সেই আদর্শগুলি জীবনে গ্রহণ করার জন্য কি কি প্রচেষ্টা করা যায়, সেই বিষয়েই চিন্তা ভাবনা করবে।
যে কোন জায়গা থেকে, যে কোন প্রকারে হোক জীবনকে সমুন্নত করে তোলার উপযুক্ত, পরিষ্কৃত এবং উৎকৃষ্ট বিচার ধারাকেই মস্তিষ্কে ভরে তোলার সাধন জোটানো দরকার।
স্বাধ্যায়ের মাধ্যমেই হোক কিংবা সৎসঙ্গ, মনন, চিন্তন ইত্যাদির সাহায্যে যে ভাবেই হোক না কেন, নিরন্তর এই প্রচেষ্টা করা উচিত যাতে মন ও মস্তিষ্ক সর্বদা উচ্চ বিচার ধারায় নিমগ্ন থাকতে পারে।
স্বাধ্যায়কে আত্ম নির্মাণ এবং আত্ম পরিশোধনের সর্বোপরি নিয়ম বলে স্বীকৃত। কেবল সগ্রন্থ পাঠ করলেই স্বাধ্যায় হয় না। স্বাধ্যায় তাকেই বলা চলে, যা আমাদের জীবনের সমস্যা এবং আন্তরিক জটিলতার উপর আলোকপাত করে এবং মানবতাকে উজ্জ্বল করে তোলার উপযুক্ত সদ্ প্রবৃত্তি অবলম্বন করার প্রেরণা জোগায়।
প্রকৃত নিঃস্বার্থ আত্মীয় বন্ধু লাভ করা নিঃসন্দেহে ভাল, কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সৌভাগ্য হয় না। ভাল বই অতি সহজেই আমাদের প্রকৃত নিঃস্বার্থ বন্ধু হতে পারে। সে আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে এবং জীবনের পথে এগিয়ে চলার বিষয়ে যথেষ্ট সহযোগিতাও করতে পারে। এই কারণেই পুস্তককে জাগ্রত দেবতা বলা হয়।
Life Changing Motivational ideas
সংযমের অর্থ হল শক্তির অপব্যয় রোধ করা। এই অপব্যয় সাধারণতঃ আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইন্দ্রিয়গুলির মধ্যে দুটি ইন্দ্রিয় হল প্রধান – একটি জিহ্বা অপরটি জননেন্দ্রিয়। অসত্য , কটু এবং অনর্থক কথা না বলার জন্য যদি জিহ্বার সংযম পালন করা যায় তাহলে আমাদের বাণী এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে অপরের প্রতি আশ্চর্য জনক রূপে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব এবং একইসাথে বরদান ও আশীর্বাদ দেবার মত ক্ষমতাও উৎপন্ন হতে পারে।
জিহ্বার দ্বিতীয় অসংযমটি হল খাদ্যের প্রতি লোলুপতা। যদি সাত্ত্বিক আহারে অভ্যস্ত হওয়া যায়, তাহলে কখনও পেট খারাপ হবে না, দুর্বলতা এবং রুগ্নতার কবলে পড়তে হবে না এবং স্বাস্থ্যের আনন্দ ও দীর্ঘজীবনের উপর কুঠারাঘাত হবার সম্ভাবনাও থাকবে না।
শরীর নির্বাহের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটাই আহার করা উচিত। জননেন্দ্রিয়ের সংযম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কামুক ব্যক্তি কোনমতেই নিরোগ থাকতে পারে না এবং দীর্ঘ জীবনের আনন্দও লাভ করতে পারে না।
তারা নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং মনস্বিতা হারিয়ে দীন, দুর্বল, কাপুরুষ, ভীতু, অস্থির এবং অন্যমনস্কতার শিকার হয়ে পড়ে। কামুকতাকে প্রতিরোধ করা, ব্রহ্মচর্যের প্রতি সমুচিত নজর রাখা, জননেন্দ্রিয়ের সংযম পালন করা প্রত্যেক বিচারশীল ব্যক্তির জন্যই এক অত্যাবশ্যক কর্তব্য।
বিবাহের উদ্দেশ্য হল- দুটি আত্মার মিলন । একে অপরের শারীরিক ও মানসিক সারতত্ত্বকে নষ্ট ভ্রষ্ট করার কাজে সম্মিলিত হবার নাম বিবাহ বন্ধন নয় বরং তা হল প্রত্যক্ষ শত্রুতা করা। সংযমের অর্থ হল শক্তির সঞ্চয় করা, অসংযমের অর্থ হল সামর্থের সর্বনাশ করা।
ইন্দ্রিয় সংযমের দ্বারা নিজেকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর করাই হল প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। একেই ব্ৰহ্মচর্য বলা হয় এবং এতেই সকলের কল্যাণ নিহিত থাকে।
ব্রহ্মচর্যের অর্থ হল ব্রহ্ম অর্থাৎ পরমাত্ম তত্ত্বে বিচরণ করা। অন্য শব্দে নিজের মনঃসংযম এবং সদাচারের মাধ্যমে কায়মনোবাক্যে উৎকৃষ্টতার প্রতি অগ্রসর হওয়া। এটি জীবনের এক উচ্চস্তরের ভূমিকা, যার জন্য দীর্ঘকালীন অভ্যাসের প্রয়োজন হয়।
ব্রহ্মচর্যের দ্বিতীয় অর্থ হল জননেন্দ্রিয়ের সংযম পালন। বাস্তবে ব্রহ্মচর্য এক প্রকারের ব্রত ও তপস্যা, যার দ্বারা মানুষকে জীবন সাধনায় নিরত থাকতে হয়। ব্রহ্মচর্য হল মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ তপশ্চর্যা।
এটি এক বিশেষ ধরণের আচার ব্যবহার, সংযম অনুশাসনবন্ধ জীবন যাপনের ভাবধারা এবং বিচার প্রধান পদ্ধতি। ব্রহ্মচর্যের সাহায্যে মানুষের বুদ্ধি প্রখর হয়ে ওঠে, ইন্দ্রিয় চাঞ্চল্য দূর হয়, স্মরণ শক্তি তীব্র হয়, মননশক্তির বিকাশ ঘটে, চিত্তে একাগ্রতা আসে, আত্মবল বৃদ্ধি পায়, আর নির্ভরতা, নির্ভীকতা এবং সাহসিকতার মত গুণ স্বতস্ফূর্ত ভাবে জেগে উঠতে শুরু করে।
মানুষের চিরযৌবন ব্রহ্মচর্যের উপর নির্ভর করে। সংযম পালন করা হলে যৌবনও সুরক্ষিত থাকে। টেলিভিশন, সিনেমা এবং অশ্লীল সাহিত্য এই তিনটি মিলে যুবকদের আজ অধোগামী করে চলেছে। অশ্লীলতা যুবকদের অশালীন পথে চলার জন্য উস্কে দেয়।
তোমরা একান্তই যদি টেলিভিশন দেখতে চাও, তাহলে কেবল সে সমস্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হও, যার সাথে তোমাদের জীবনকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলবার মত ঘনিষ্ট সম্বন্ধ থাকে। কেবল মনোরঞ্জনের উপযুক্ত অথবা জ্ঞানলাভ করার সিরিয়াল দেখা উচিৎ।
ব্রহ্মচর্য রক্ষা করার উপায়
- সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা, প্রতিদিন সকালে বেড়ানো কিংবা দৌড়ানোর অভ্যাস করা।
- যোগাসন ও প্রাণায়াম করা।
- অঙ্কুরিত শষ্যের প্রাতরাশ গ্রহণ করা। তেল , মশলা যুক্ত আহার পরিত্যাগ করা।
- মনে কোনরকম কামনা বাসনার উদয় হবার সাথে সাথে মনে মনে ভাবতে শুরু করে দেওয়া যে, আমি একবিশুদ্ধ আত্মা। আমার ইন্দ্রিয়গুলি আমার বশবর্তী , আমি সব সময় কেবল শুভ চিন্তাই করি। আমার সংকল্প মহান। আমি কখনই বিষয় বাসনার বশবর্তী নই।
- ব্রহ্মচর্য পালন করার মর্যাদা অনুভব করা।
- মনকে শুদ্ধ এবং সাত্ত্বিক চিন্তা ভাবনায় নিমগ্ন রাখা।
- সদাচারী হবার সংকল্প করা।
- নারীদের প্রতি পবিত্র মনোভাব পোষণ করা।
- নর্তকী , অভিনেত্রীদের নৃত্য কিংবা অভিনয়ের বিষয়ে চিন্তা ও স্মরণ না করা।
- শরীর সে তোমার নিজের হোক কিংবা অপরের, তাকে সবসময় মাটির ডেলার মত ভেবে নিয়ে, আত্মা, চেতনা ও প্রাণের বিষয়ে বিচার করবে। এর ফলে সমস্ত কামনা বাসনা দূর হয়ে যাবে।
সংকল্প কর যে সর্বদা সদাচারী হয়ে উন্নতির পথে এগিে যাব এবং অন্যান্যদেরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করব।