চুল মানুষের সৌন্দর্যের শোভা বাড়াতে সাহায্য করে সে পুরুষ হোক কিংবা মহিলা, আর সময়ের আগেই যদি চুল পড়ে যায়, তাহলে চেহারায় তার খারাপ প্রভাব পরতে থাকে, তাই শরীর ও স্বাস্থ্যের মতো চুলের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি,
Contents List
Best Ways to Stop Hair Loss In Men
আজ আমরা আলোচনা করবো ছেলেদের চুল পড়া এবং পাতলা চুল নিয়ে, এখানে আপনি জানতে পারবেন চুল পড়া বন্ধ করা নিয়ে ৬টি রেমেডি বা প্রতিকার যেগুলো অনুসরণ করলে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং কেশ হয়ে উঠবে ঘন চকচকে ও মসৃণ,
চুল পড়া রোধ করার উপায় ও প্রতিকার গুলো জানার আগে আমরা এক এক করে জেনে নেবো কি কি এমন কারণ আছে যার জন্য চুল ঝড়ে যায়, ও ধীরে ধীরে চুল উঠে চুল ফাঁকা হতে থাকে, এবং মাথার চুল পাতলা হয়ে যায়,
ছেলেদের চুল পড়ার কারণ
1. একটি সাধারণ কারণ সকলেই শুনে থাকবেন male pattern baldness বা পুরুষের টাক পড়া, এটির কারণ হলো শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় DHT বেড়ে যাওয়ার ফলে, DHT যখন অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায় তখন এটি চুলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে,
যখন শরীর টেস্টোস্টেরন হরমোনকে অধিক মাত্রায় DHT তে পরিবর্তিত করতে থাকে, তখন চুলের গ্রন্থিগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়, এবং চুলের বৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়ে, এভাবে ধীরে ধীরে চুলের গ্রন্থি গুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে ও চুলের গ্রোথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, এই সমস্যা দেখা দেয় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, এবং এছাড়াও চুল ঝড়ে যাওয়ার সমস্যা বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্যেও ঘটে,
2. চুল পড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হতে পারে অত্যধিক গরম, অনেক ব্যাক্তি এমন আছেন যারা hair dryers বা চুল শুকনো করার জন্য মেশিন ব্যাবহার করে থাকেন, আবার অনেক কে বেশিক্ষণ রোদ্দুরে থাকতে হয় বা আবার কেউ কেউ গরম জলে স্নান করে থাকেন, এর কারণে চুল অনেক বেশি শুকনো হয়ে যায় এবং চুলের প্রোটিন কাঠামো খারাপ হতে থাকে, যার কারণে চুল ঝরে যেতে থাকে,
3. বেশি ঘাম হওয়ার কারণেও চুল পড়ে যায়, ঘামের মধ্যে যে লবণ থাকে তা চুলের স্ক্যাল্পে জমে যায় এবং ছিদ্র আবদ্ধ হয়ে যায়, আর লবণে যে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে তা প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে, এর ফলে চুলের বিকাশে সাহায্যকারী প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়,
4. অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চুল পড়া রোধ করতে বিভিন্ন শ্যাম্পু, তৈল, ও নানান কেশ সামগ্রী ব্যাবহার করা হয়, এর বেশির ভাগের মধ্যেই ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে যেমন প্যারাবেন, সালফেট, অ্যালকোহল ইত্যাদি, যা চুলকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকে,
5. এছাড়াও চুল পড়ে যাওয়ার পিছনে কিছু সাধারণ কারণ কাজ করে যেমন ছত্রাক সংক্রমণ, দূষণ, পুষ্টির অভাব, ট্রেস বা অতিরিক্ত চিন্তা প্রভৃতি,
ছেলেদের চুল পড়ার প্রতিকার ও সমাধান
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক চুল পড়া বন্ধ করার 6টি রেমেডি বা প্রতিকার সম্বন্ধে, যেগুলো অনুকরণের মাধ্যমে চুল ঝরে পড়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে,
1. পেঁয়াজ এবং মেথি গুঁড়া
পরিমাণ মতো পেঁয়াজ রসের সাথে এক চামচ মেথি দানার গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন, মিশ্রণটিকে মাথার চামড়ায় লাগান, আধ ঘন্টা রাখার পর শ্যাম্পু দ্বারা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন,
পেঁয়াজে থাকে অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপাটি, আর মেথি দানার মধ্যে থাকে DHT কে বদ্ধ করার প্রতিষেধক, তাই এই দুটির মিশ্রণ চুলের জন্য খুব উপকারী, এটি সপ্তাহে তিন বার ব্যবহার করা যেতে পারে,
2. অ্যালোভেরা জেল কন্ডিশনার
এটি প্রস্তুত করতে কাঁচা এলোভেরার জেল এর সাথে দই মিশিয়ে নিতে হবে, ঠিক করে মিশ্রণ টিকে একত্রিত করে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে লাগাতে হবে, এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগিয়ে রাখার পর, শ্যাম্পু দ্বারা পরিষ্কার করে নিন,
এই মিশ্রণটি তে আছে ভিটামিন C, E, B12, এবং ফলিক অ্যাসিড, যেটা চুলকে শক্ত করার সাথে সাথে কোমল করে, ভালো ফল পাওয়ার জন্য এই মিশ্রণটিকে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করা যেতে পারে,
3. DHT ব্লকার মাস্ক
একটি পাত্রে কলাকে পিষে নিয়ে তাতে দুই চামচ অলিভ অয়েল এবং এক চামচ পেয়াজের রস, আর অল্প পরিমাণ লেবুর রস নিয়ে তিনটি উপাদানকে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে, এবং এই মিশ্রণটি পাঁচ মিনিট স্ক্যাল্পে মেসেজ করার পর কুড়ি মিনিট রেখে দিন, এবং এর পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন, এটি সপ্তাহে এক বার করা যেতে পারে,
এই রেমেডি টি ব্যবহারের ফলে চুল পড়া রোধ হবে ও দ্রুত চুলের বৃদ্ধি পাবে,
4. নারকেলের দুধ Coconut Milk
নারকেলের দুধের মধ্যে প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যেটা চুলের যত্নে ও চুল পড়ার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে,
নারকেলের দুধেকে অল্প করে নিন, আর চুলের গোড়ায় ভালো করে মেসেজ করুন, এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন, এটি ব্যবহার এর ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে, সপ্তাহে অন্তত একবার এটি ব্যবহার করুন, ভালো ফল পাবেন,
5. Green Tea – সবুজ চা
দুই থেকে তিনটি সবুজ টি ব্যাগ গরম জলে রেখে দিন, এবং জল ঠাণ্ডা হতে দিন, চুলে শ্যাম্পু করার পর মাথায় দিয়ে তিন চার মিনিট মেসেজ করুন, তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন,
সবুজ চায়ে কেটেকিনস থাকে যা DHT কে কম করতে সাহায্য করে, এতে থাকে পলিফিনল যেটা চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে, গ্রীন টি এর এই রেমিড টি চুলের জন্য সপ্তাহে দু বার ব্যবহার করা যেতে পারে,
6. চুলে জন্য তেল ম্যাসাজ,
বাজারে চুলের জন্য অনেক রকমের সুগন্ধী তেল পাওয়া যায়, কিন্তু সব তেল চুলকে ভালো রাখতে পারে না, তাই চুল ভালো রাখতে ও চুল পড়া কম করতে ন্যাচারাল তেলের ব্যবহার বেশি করুন, যেমন নারকেল তেল, মাস্টার্ড অয়েল বা সরিষা তেল, অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ইত্যাদি,
যদি তেলের সাথে অল্প পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে নেওয়া যায় তাহলে ভালো ফল মিলবে, চুলে তেল লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে আঙ্গুলের চামড়া ব্যবহার করার, ও হাল্কা হতে ম্যাসাজ করা, সপ্তাহে অন্তত এক থেকে দুবার এটি করতে পারেন,
লেবু চুলের জন্য খুব উপকারী, কারণ লেবুতে থাকে ভিটামিন C, যেটি চুল ও চামড়ার জন্য খুব ভালো একটি উপাদান,
চুলে ম্যাসাজ করার ফলে মাথার চামড়ায় ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয়, যার ফলে চুল গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কম হয়,
Caution – সাবধানতা
সবশেষে চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলকে ভালো রাখতে আমাদের কিছু বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকা খুবই জরুরি, যখনই চুলের যত্নের জন্য কোনো হেয়ার প্রোডাক্ট ক্রয় প্রয়োজন পড়বে তখন খেয়াল রাখতে হবে তা যেনো কেমিক্যাল মুক্ত হয়,
এছাড়াও চুলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন, ও বেশি ক্ষার যুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু চুলের জন্য ক্ষতিকর, রোজ শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে চুলের মধ্যে যে ন্যাচারাল অয়েল ও ময়েশ্চার বা আদ্রতা থাকে তা কমে যেতে থাকে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য বাঁধা প্রাপ্ত হয়,